প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস
বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি) ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি যা বাংলাদেশে সাবমেরিন ক্যাবল এর চালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে এবং বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক তথ্য সুপারহাইওয়ে এর সাথে সংযুক্ত রেখেছে। বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড (সংশোধনী) অধ্যাদেশ ২০০৮ এর ৫বি ধারাবলে কক্সবাজারস্থ ল্যান্ডিং স্টেশনসহ এসএমডব্লিউ-৪ সাবমেরিন ক্যাবলকে বিলুপ্ত বিটিটিবি থেকে আলাদা করে “বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)” নামক একটি নতুন কোম্পানি গঠন করা হয় যা গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রি তারিখে আরজেএসসি হতে ছাড়পত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে “বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি)” এ পরিবর্তিত হয়।
২৪ জুন ২০০৮ তারিখে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসাবে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও ফার্মের নিবন্ধক (আরজেএসসি) বিএসসিপিএলসিকে ইনকর্পোরেশন সার্টিফিকেট এবং সার্টিফিকেট অফ কমেন্সমেন্ট অফ বিজনেস প্রদান করে। ৩০ জুন ২০০৮ তারিখে সরকারের সাথে ভেন্ডরস এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয় এবং ০১ জুলাই ২০০৮ তারিখ হতে বিএসসিপিএলসি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসাবে কার্যক্রম শুরু করে।
বিএসসিপিএলসি এর মোট অনুমোদিত মূলধন ১০০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১৬৪.৯১ কোটি টাকা। বিএসসিপিএলসি ২০১২ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জে তালিকাভূক্ত হয়।
২০১২ সালে বিএসসিপিএলসি আইআইজি লাইসেন্স প্রাপ্ত হয় এবং জুলাই ২০১৩ সাল হতে আইপি ট্রানজিট সেবা প্রদানের কার্যক্রম শুরু করে।
২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর বর্তমান সরকার ভিশন ২০২১ ঘোষণা করে এবং দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করার কর্মসূচি নেয়। শুরু থেকেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসেবে সাবমেরিন ক্যাবল ভূমিকা রেখেছে। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিস্তৃত ইন্টারনেট ব্যবস্থা এক্ষেত্রে মূখ্য নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। এক্ষেত্রে একটিমাত্র সাবমেরিন ক্যাবলের উপর নির্ভরশীলতা দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থার জন্য ঝুকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এছাড়াও সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ এবং দেশের টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে প্রভূত উন্নয়নের ফলে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পায় । বাংলাদেশ SEA-ME-WE-5 সাবমেরিন ক্যাবল কনসোর্টিয়ামের সাথে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সমঝোতা স্মারক ও ২০১৪ সালের মার্চে কনস্ট্রাকশন এন্ড মেইন্টেনেন্স এগ্রিমেন্ট (সিএন্ডএমএ) স্বাক্ষর করে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উদ্বোধন শেষে বাণিজ্যিকভাবে এসএমডব্লিউ-৫ এর মাধ্যমে সেবা প্রদান শুরু করা হয়।
দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসার ও সর্বোপরি স্বল্পমূল্যে মানসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা ব্যবস্থা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাবমেরিন ক্যাবলের বিকল্প নেই। এছাড়াও দেশের প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল এসএমডব্লিউ-৪ এর আয়ুষ্কাল ২০৩০ সালে নিঃশেষ হয়ে যাবে বিধায় SEA-ME-WE 6 (এসএমডব্লিউ-৬) কনসোর্টিয়ামের আওতায় বাংলাদেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের কাজ বিএসসিপিএলসি হাতে নিয়েছে এবং গত ২৩/৯/২০২১ তারিখে কনসোর্টিয়ামের সকল সদস্যের সাথে কনস্ট্রাকশন এন্ড মেইন্টেনেন্স এগ্রিমেন্ট (সিএন্ডএমএ) স্বাক্ষর ও সরবরাহকারী (কনসোর্টিয়াম কর্তৃক নির্বাচিত) এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। গত ১৫/০২/২০২২ তারিখে সরবরাহ চুক্তি ও কনস্ট্রাকশন এন্ড মেইন্টেনেন্স এগ্রিমেন্ট (সিএন্ডএমএ) কার্যকর (কামিং ইনটু ফোর্স) হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে যে, ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তিকে এসএমডব্লিউ-৬ সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হবে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ শুরুতেই আরো ১৩,২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ সক্ষমতা অর্জন করবে।
প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে লাভজনক কোম্পানি হিসাবে বর্তমান সরকারের দিক নির্দেশনায় একে একে সাফল্যের নানা দ্বার উন্মোচন করে আসছে যা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যান্ডউইড্থ চাহিদার সিংহভাগ সরবরাহের পাশাপাশি দেশের বাইরেও ব্যান্ডউইড্থ সরবরাহে বিএসসিপিএলসি সচেষ্ট রয়েছে। বিএসসিপিএলসি ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের প্রদেশগুলোতে ব্যান্ডউইড্থ সরবরাহ করছে এবং এ সংক্রান্ত আইপি ট্রানজিট লিজ প্রদানের একটি চুক্তি গত ৬ জুন, ২০১৫ খ্রি. তারিখে ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময়কালে স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ভারত এর উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রদেশগুলোর জন্য প্রাথমিক অবস্থায় ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইড্থ বাংলাদেশ হতে লিজ প্রদান করা হয়। গত ২৩শে মার্চ, ২০১৬ খ্রি. তারিখে বাংলাদেশ ও ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীদ্বয় ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে লিজ প্রদান কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এই লিজ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চালু ছিল। পরবর্তীতে ত্রিপুরায় ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ লিজ দেয়ার জন্য নতুন করে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং এই চুক্তির আওতায় গত ২৬ নভেম্বর, ২০২১ খ্রি. হতে সেবা চালু করা হয়েছে। বিএসএনএল এর চাহিদার প্রেক্ষিতে বর্ণিত চুক্তির আওতায় এপ্রিল, ২০২২ হতে ত্রিপুরায় ২০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ লিজ দেয়া হচ্ছে।
দেশের অভ্যন্তরে বিএসসিপিএলসি এর মোট ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার এর প্রায় ৯৫% পূর্ব দিক তথা সিঙ্গাপুর অভিমুখি। এ পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিম প্রান্তে অর্থাৎ ইউরোপ অংশের অব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ ব্যান্ডউইডথ ক্যাপাসিটি হতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুদ রেখে উদ্বৃত্ত ক্যাপাসিটি আন্তর্জাতিক বাজারে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের নিকট দীর্ঘমেয়াদী লিজ প্রদান/ট্রান্সফারের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের লক্ষ্যে বিএসসিপিএলসি সচেষ্ট রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে এসএমডব্লিউ-৫ সাবমেরিন ক্যাবলের পশ্চিম প্রান্তে অর্থাৎ ইউরোপ অংশের অব্যবহৃত পশ্চিম অংশের কোর হতে সৌদি আরবের ইয়ানবু থেকে ফ্রান্সের মার্সেই পপ পর্যন্ত ২৫.৩১% ক্যাপাসিটি (বর্তমানে প্রায় ৬৫০ জিবিপিএস এর সমতুল্য) ১২ মে ২০২১ হতে সৌদি টেলিকম কোম্পানি (এসটিসি) এর নিকট এবং ১৩ জুলাই ২০২১ হতে সিঙ্গাপুর-ফ্রান্স রুটে ১৩ জিবিপিএস ক্যাপাসিটি ফ্রান্স ভিত্তিক টেলিকম অপারেটর অরেঞ্জ-কে ক্যাবল লাইফের জন্য লিজ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও জিবুতি-মার্সেই (ফ্রান্স) রুটে ২০০ জিবিপিএস ক্যাপাসিটি টেলিকম মালয়েশিয়া (টিএম)-কে ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ হতে আগামী ১০ বছরের জন্য লিজ প্রদান করা হয়েছে । ফলে, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব বিএসসিপিএলসি বৈদেশিক মুদ্রায় উপার্জন করতে সক্ষম যোগ হয়।